৮। ওডিসিয়াস অ্যান্ড পেনেলোপঃ
গ্রীক অন্যান্য
প্রেমের গল্পের মতোই, এই জুটির প্রেমমেও ছিল, ত্যাগ আর বিসর্জন। প্রেমের ক্ষেত্রে গ্রীক পুরাণের বেশীর
ভাগ কাহিনীরই মূলমন্ত্র হল,
“Tragedy and sacrifice.” জুটি
তাঁদের মিলনের জন্য অপেক্ষা করেছিল দীর্ঘ ২০ বছর! তাঁদের বিয়ের কিছু পরেই ওডিসিয়াসকে
যুদ্ধে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর
প্রত্যাবর্তননের আশায় আশায় পেনেলোপ তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল ২০ বছর। এরমধ্যে তিনি ১০৮ জন রাজাকে প্রত্যাখ্যান
করেছিল, অপরদিকে ওডিসিয়াসও স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্থ ছিলেন। তিনিও অনেক
দেবীর প্রেম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। Homer রচিত এই এপিকে
তিনি প্রমাণ করেছেন, “ভালোবাসার অন্য নাম- অপেক্ষা!” তিনি বলেছেন, “remember that true love is worth waiting for!”
৯। পাউলো অ্যান্ড ফ্রান্সেসকাঃ
সত্য কাহিনী
অবলম্বনে এই চরিত্র দুটি নেয়া হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত লেখক Dante-এর অমর সাহিত্য কর্ম হল “Divine Comedy” থেকে। ফ্রান্সেসকার স্বামী মালাটেস্তা ছিলেন একজন ভয়ানক অপরাধী। তাঁর ছোট
ভাই পাউলোর সাথে মিলে ফ্রান্সেসকা Dante এর বই পড়ে সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে
প্রেম জন্মে নেয়। ঘটনা জানাজানি হবার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই
ফ্রান্সেসকার স্বামী দুজনকেই হত্যা করে।
১০। স্কারলেট ও’হারা অ্যান্ড রেথ বাটলারঃ
বলা হয়ে থাকে
বিখ্যাত লেখক Margaret
Mitchell এর কালজয়ী ক্লাসিক
“Gone with the Wind,” হল ভালোবাসা বাসি মানুষের জন্য এক
বাইবেল! সিভিল ওয়ারের পটভূমি নিয়ে, এবং স্কারলেট-বাটলারের বাঁধন হারা-উন্মাতাল
প্রেম, মানসিক টানাপোড়ন, চাওয়া- পাওয়ার হিসেব, দেশের অস্থির সময়—এই সব কিছু মিলিয়েই এটি হয়ে উঠেছে অমর এক সাহিত্য কর্ম। উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্কারলেট
কখনোই কারও বাঁধনে নিজেকে বাঁধতে
নারাজ ছিল। কিন্তু বাটলারের উন্মত্ত প্রেমকে সে কখনোই উপেক্ষা করতে পারেনি। সুখী জীবনের চিন্তায় বিভোর স্কারলেটের
সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। তাঁর
মনস্তান্তিক দ্বন্দ্ব রয়েই গেল। আর তাইতো শেষে স্কারলেট বলেছিল, “Tomorrow is another day!”
১১।
জেইন আয়ার অ্যান্ড এডওয়ার্ড রজেস্টারঃ
লেখক ‘’Charlotte Bronte” এর বিখ্যাত উপন্যাস “Jane Eyre” এর প্রধান চরিত্র জেইন ছিল এতিম এক মেয়ে, যে কিনা ব্যবসায়ী রজেস্টারের ঘর দেখভাল করার জন্য গভর্নেস হিসেবে আসে। বয়সে অনেক বড় আর প্রচণ্ড একা একটা মানুষ রজেস্টারের জীবনে জেইন যেন এক বসন্ত নিয়ে
এসেছিল। বয়স কিংবা সামাজিক ব্যবধান
কোন কিছুই তাঁদের প্রেমে বাঁধা হতে পারেনি। কিন্তু বিয়ের দিনে জেইন আবিষ্কার করে রজেস্টার পূর্ববিবাহিত। জেইন
তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। পরে জেইন জানতে
পারে, রজেস্টার তাঁর অসুস্থ ও পাগল স্ত্রীর
প্রতি কোন অবহেলা করেনি। শুধু
তাঁকে হারাবার ভয়ে এই সত্যটা গোপন করেছিল। পরে যদিও ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডে রজেস্টার তাঁর বাড়ি, অসুস্থ স্ত্রী কে হারিয়ে ফেলেছিল। সে নিজেও তাঁর দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল।
অবশেষে দীর্ঘ বিরহের পর জেইন তাঁর কাছে
ফিরে আসে। এই উপন্যাসের প্রতিটি বাক্য যেন এক একটি প্রেম প্রত্র!! প্রচণ্ড আবেগি সব লেখা পড়ে পাঠকের মন খুব সহজেই
প্রবাবিত হয়।
১২। লায়লা এবং মজনুঃ
মধ্যযুগীয় ইরানী
কবি “Nizami of Ganje” নামে যিনি পরিচিত, তিনি আরবীয় সামাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেন, “Layla and Majnun is a tragic tale
about unattainable love.” প্রেমের
ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুটি চরিত্র, লায়লা ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বাল্যকাল থেকেই লায়লা আর
মজনুর প্রেম গড়ে উঠে। কিন্তু দুজনের
সামাজিক ব্যবধান বিপত্তি বাঁধাল। বলা আছে, লায়লার
পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লারও
আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। মজনু কে মরুভূমিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে বেদুঈনের দল
মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে
তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তাঁরা লায়লার বাবাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়। লায়লাকে
তাঁর পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে
দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাবার পর, যদিও লায়লা
মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু
মারা যায়। লায়লাও তাঁর ভালোবাসা মজনুর পথ
অনুসরণ করে। “দুই দেহ এক আত্মা,” নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।
১৩। লুইস অ্যান্ড বেলার্ডঃ
“A story of
a monk and a nun,” যাদের
চিঠিগুলোই সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। “লাভ লেটারস” বলে
আমরা যে টার্ম টা ব্যবহার করি, তা এই যুগলের
বদৌলতেই পাই। প্যারিসের বিখ্যাত নটরডেম স্কুলে পড়তে
যায় পিটার বেলার্ড। তাঁর শিক্ষক বিখ্যাত
দার্শনিক ফ্লোবার্ডের অনুরোধে, ভগ্নীকন্যা
লুইসকে পড়াতে রাজী হয়। বেলার্ডের
জ্ঞান, মেধা এবং বুদ্ধিমত্তার আকৃষ্ট হয়ে লুইস
বেলার্ডের প্রেমে পড়ে যায়। তাঁরা
গোপনে বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হয় এবং লুইস গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ফ্লোবার্ড। তাঁর ভয়ে
বেলার্ড, লুইসকে নিরাপদ জায়গায় রেখে আসে। কিন্তু এক রাতে ফ্লোবার্ডের
অনুচররা ঘুমন্ত বেলার্ডের অঙ্গহানি
করে। বেলার্ডের কষ্টে বাকী জীবন লুইস নান হিসেবে কাটিয়ে দেয়, এবং বেলার্ড
হয়ে যায় একজন মঙ্ক (ধর্মীয় গুরু)! ইতিহাস হয়ে থাকে তাঁদের আত্মত্যাগ, আজও
বিখ্যাত হয়ে আছে তাঁদের প্রেম পত্রগুলো।
১৪। রামোস অ্যান্ড থিইবীঃ
খুবই আবেগি আর
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান
প্রেম কাহিনী। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাঁদের
প্রেম দিয়ে প্রভু থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে, স্বর্গেও
তাঁরা এক সাথে থাকবে! ব্যবিলনের সবচেয়ে
সুন্দরী কুমারী থিইবীর বাল্যকালের বন্ধু ছিল
সুপুরুষ রামোস। তাঁরা ছিল প্রতিবেশী। একই সাথে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাঁদের পরিবার এই
সম্পর্ক মেনে নেয় না। তাই তাঁরা ঘর
ছেড়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় ঘর পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরী গাছের কাছে দুজনের দেখা করার
কথা থাকে। থিইবী গোপনীয়তা রক্ষার্তে
মুখে একটা কাপড় পরে (veil)
রেমোসের জন্য
গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে।
হঠাৎ এক ক্ষুদার্ত সিংহ আসে থিইবীর কাছে। ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্যজায়গায় আশ্রয় নেয়ার সময় তাঁর মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে
যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে, সিংহের মুখে সেই
কাপড়। সে ভাবে যে, সিংহ তাঁর থিইবীকে ভক্ষণ করেছে। সেও তাঁর ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ
পর থিইবী এসে মৃত রামোসকে দেখতে
পায়। তারপর সেও সেই একই ছুরি দিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।
wow
উত্তরমুছুন